সংকলন- অমরনাথ বসুমল্লিক
“আমি চাই এমন মানুষ-যাহাদের শরীরের পেশীসমূহ লৌহের ন্যায় দৃঢ় ও স্নায়ু ইস্পাত নির্মিত হইবে। আর তাহাদের শরীরের ভিতর এমন একটি মন বাস করিবে, যাহা বজ্রের উপদানে গঠিত। বীর্য্য, মনুষ্যত্ব ক্ষত্রবীৰ্য্য – ব্রহ্মতেজ” —
১৯৩৩ সালে মুদ্রিত সঙ্ঘের নিয়মাবলীর উপরিভাগে স্বামী বিবেকানন্দের এই বানী মুদ্রিত রয়েছে পাওয়া যায়। সঙ্ঘের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হাওড়ার জননেতা হরেন্দ্রনাথ ঘোষের দেওয়া বিবৃতিতে দেখতে পাওয়া যায়, স্বাস্থ্য উন্নতির সাথে সাথে যাতে এই সংঘের সভ্যগণের মানসিক উন্নতি হয়, সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার পূর্বে প্রতিষ্ঠাতাগণের পক্ষের মধ্যে ইহাই মুখ্যভাবেই স্থান পেয়েছিল। এছাড়া প্রথম থেকেই সঙ্ঘের উদ্যোক্তাদের প্রতীক বানী হল, “শিক্ষাদান-সংগঠন-একতা।” প্রতিষ্ঠালগ্নের সঙ্ঘের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যর সঙ্গে সঙ্গে শরীর ও মনের দিক দিয়ে জাতিকে গড়ে তোলার স্বপ্নও দেখেছিলেন, এর স্থপতিরা এই কর্মধারার মধ্য দিয়ে। আর সেই স্বপ্নকে স্বার্থক করে তুলতেই সেদিন প্রতিষ্ঠা হয়েছিল সঙ্ঘের ব্যায়ামাগার ও পাঠাগার।
১৯০৩ সালে অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশহিতব্রতী কর্মী তৈরী করার উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলার নানা স্থানে যে সব সংঘ সমিতি প্রতিষ্ঠার সূচনা হয়েছিল, তার প্রয়োজনীয়তা আরও বেশী করে অনুভূত হয় যখন অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে অধিক সংখ্যক সংগ্রামী কর্মীর প্রয়োজন দেখা দেয়। সাধারণ মানুষ প্রকাশ্যে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সামিল হতে চাইতেন না, তাই পল্লীর জনগণের সর্বপ্রকার সেবা, ব্যায়ামচর্চার দ্বারা শরীরে গঠন একই সঙ্গে পাঠাগার তৈরীর মাধ্যমে তরুণ যুবকদের দেহ ও মনকে সবল করে তুলতে পারলে দেশহিতৈষী কর্মী সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। এই উদ্দেশ্য নিয়েই উদ্যোক্তারা “হাওড়া সেবা সঙ্ঘ” প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
সঙ্ঘের প্রথম সাধারণ সম্পাদক হরেন্দ্রনাথ ঘোষের তথ্যের ভিত্তিতে এটুকুও জানা যায়, নরসিংহ দত্ত রোড ও হেম চক্রবর্তী লেনের সংযোগ স্থলে অজিত কুমার মল্লিকের মাঠেই প্রথম সঙ্ঘের কর্মসূচী শুরু হয়। সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠার জন্মলগ্নে যাদের সক্রিয় যোগদানে সঙ্ঘের অঙ্কুর পোঁতা হয়েছিল, এই মুহূর্তে তাঁদেরকে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।
১। হরেন্দ্রনাথ ঘোষ
২। সুরেন্দ্রনাথ ঘোষ
৩। ধীরেন্দ্র মোহন সেন, এম. এ. বি. এল.
৪। অজিত কুমার মল্লিক
৫। গৌরী মোহন রায়, এম. এ.বি.এল.
৬। শরৎচন্দ্র পাল
৭। বিজয় কৃষ্ণ হাজরা।
সঙ্ঘের রজত জয়ন্তী উৎসবে হরেন্দ্রনাথ ঘোষের প্রতিবেদনে জানা যায়, পরবর্তীকালে সঙ্ঘের স্থান পরিবর্তনের প্রয়োজনে বিশ্বেশ্বর ব্যানার্জী লেনে সঙ্ঘের কর্মসূচী স্থানান্তকরণ করা হয়। সেই সময় হরেন্দ্র নাথ ঘোষও থাকতেন বিশ্বেশ্বর ব্যানার্জী লেনে। তার বাড়ির সামনে একটি ছোট মাঠেই বক্সিং, লাঠিখেলা প্রভৃতি ব্যায়াম অনুশীলন শুরু হয়। সেই সময় সঙ্ঘ পরিচালকবৃন্দের মধ্যে সন্তোষ কুমার ঘোষাল, ডাঃ শম্ভুনাথ মুখোপাধ্যায় ও ডাঃ যজ্ঞেশ্বর চক্রবর্তীর নাম পাওয়া যায়।
হরেন্দ্রনাথ ঘোষ জেল বন্দি হন। একই সঙ্গে সঙ্ঘের স্থান পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়, সঙ্ঘের কর্মসূচী জয়দেব কুণ্ডু লেনে স্থানাস্তিকরণ করা হয়। তার অবর্তমানে হরেন্দ্রনাথ ঘোষের দাদা সুরেন্দ্রনাথ ঘোষ সঙ্ঘের কার্যাবলী এগিয়ে নিয়ে যান। পরিচালকমণ্ডলীর মধ্যে ছিলেন পতিতপাবন চ্যাটার্জী ও পঞ্চানন ঘোষ।
এর আগে সঙ্ঘে শক্তিচর্চা এবং সেবা কার্য্য চালু ছিল, কিন্তু কোন পূজা পার্ব্বনের অনুষ্ঠান হয় নি। সাধারণ মানুষকে নিয়ে হাওড়া শহরে প্রথম সর্ব্বজনীন দুর্গাপূজা শুরু হল ১৯২৭ সালে। নরসিংহ দত্ত রোডে বামাচরণ কুণ্ডু মহাশয়ের মাঠে হাওড়া সেবা সঙ্গের উদ্যোগে। পূজোর দ্বিতীয় বৎসর থেকে শুরু হল পুতুল নিয়ে প্রদর্শনী ও মেলা। উদ্বোধন করেছিলেন যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের সহধর্মিনী নেলী সেনগুপ্তা, সভাপতি ছিলেন বরদা প্রসন্ন পাইন। একই সঙ্গে ১৯২৮ সালে শুরু হল বীরাষ্টমী ব্রত পালন। সেই থেকে সঙ্ঘের সভ্যরা এই উৎসব পালন করে আসছেন। ১৯৫২ সালে বীরাষ্টমীর উৎসবে উপস্থিত ছিলেন মেঘনাদ সাহা।
অল্প সময়ের মধ্যেই সঙ্ঘের কার্য্য তালিকায় ব্যায়ামচর্চা ও জনসেবার সঙ্গে কার্ত্তিক চন্দ্র দত্তর সুযোগ্য পরিচালনায় সঙ্ঘের সদস্যরা কংগ্রেসের নিদ্দিষ্ট অনুষ্ঠানে যোগদান করতে শুরু করে। কার্ত্তিক চন্দ্র দত্তর নেতৃত্বে সঙ্ঘে নবজাগরণ ঘটে। সঙ্ঘের সভ্যরা নৈশ বিদ্যালয়, তাঁত ও চরকার প্রবর্তনের চেষ্টা করেন। Relief Welfare Ambulance Camp (R.W.A.C.) প্রতিষ্ঠিত হয় সঙ্ঘ সদস্যদের দ্বারা। কার্ত্তিক চন্দ্র দত্ত ও হরেন্দ্রনাথ ঘোষের নেতৃত্বে যুব-সম্প্রদায় একত্রিত হয় নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর নির্দেশে। সঙ্ঘ সদস্যরা নিজস্ব বাদ্য বিভাগকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত করে। নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির কলিকাতা অধিবেশন, ১৯৪০ সালে রামগড় আপোষ বিরোধী সম্মেলন, বাউড়িয়া ফরোয়ার্ড ব্লক কনফারেন্স, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর অভ্যর্থনায়, জহরলাল নেহেরু ও শরৎ চন্দ্র বসুর সভায়, শাওনাওয়াজ খান ও মহাত্মা গান্ধীর সভায় অংশ নেন।
ব্রিটিশ সরকারের শোনদৃষ্টি সঙ্ঘ সদস্যদের সেই সঙ্গে সঙ্ঘের ওপর পরে এবং সঙ্ঘ বেআইনী ঘোষিত হয়। সঙ্ঘ ভবনে তালা পড়ে। সমস্ত কাগজপত্র এবং মূল্যবান বই নষ্ট করে দেয় ব্রিটিশ সরকার। সেই কারনেই ১৯৩৭সালের আগে কোন নথি সঙ্ঘ আর পায় নি। সঙ্ঘের কর্মীগণ গোপনে কাজকর্ম করতে থাকেন এবং একই সঙ্গে স্বাধীনতা অর্জনের ঐকান্তিক চেষ্টা চালাতে থাকেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে সঙ্ঘের অনেক সদস্য কারাবরণ করেন। প্রথম পর্যায়ে এই দলে ছিলেন কাত্তিক চন্দ্র দত্ত, বিজয় কৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য, হরেন্দ্রনাথ ঘোষ প্রমুখ। সেই সময় থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সামাজিক প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি সঙ্ঘ লাভ করে।
সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সেবা, ব্যায়ামাগার ও পাঠাগার একই সঙ্গে শুরু হয়েছিল, সঙ্ঘ রাজরোষের পড়ার ফলে অনেক মূল্যবান গ্রন্থ নষ্ট হয়েছে। রাতারাতি স্থানান্তরিত করেও তা বাঁচানো যাইনি, তার হিসাব করা সম্ভব নয়। তারপর পাঠাগার পুনর্গঠিত হয় ১৯৩৮ সালে। ১৯৪৩ সালে সঙ্ঘ পাঠাগার ও কাৰ্য্যালয় ৩৩/১, নরসিংহ দত্ত রোডে স্থানান্তরিত হয়। সেই সময় হাওড়া পৌর প্রতিষ্ঠান পাঠাগারকে ১০০ টাকা করে অর্থ সাহায্য করতেন। প্রায় প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে এই বিভাগকে সমৃদ্ধ করতে মদন মোহন মল্লিক ও সুকুমার লাহা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেন। বর্তমান সময়ে সরকারী অধিগ্রহণ করেও গ্রন্থাগারিকের অভাব এবং পাঠকদের আগ্রহ দিন দিন ক্ষীণ হয়ে আসছে।
রজত জয়ন্তী উৎসবের আগে খুব সম্ভবতঃ ১৯৪৮ সালের ২৯শে মে সঙ্ঘ রেজিস্ট্রিকৃত (১৮৬০ সালের ২১ নং আইন) করা হয়। সঙ্গের রজত জয়ন্তী উৎসব সম্পন্ন হয় ১৯৪৯ সালে। উৎসবে পৌহিত্য করেন কথা সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ও উপেন বন্দ্যোপাধ্যায়। পাঠাগারের উদ্যোগে নববর্ষ উৎসব, রবীন্দ্র জন্মোৎসব, সাহিত্য সভা, বিতর্ক ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা শুরু হয়। সেই সব মহতী অনুষ্ঠানে আসন অলংকৃত করেছেন দেশ পত্রিকার সম্পাদক বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র সেন, অখিল নিয়োগী, হেমেন্দ্র প্রসাদ ঘোষ প্রভৃতি সাহিত্য অনুরাগীরা। যদিও সঙ্ঘের পাঠাগার বার বার বিভিন্নভাবে ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। মূল্যবান গ্রন্থ নষ্ট করেছে বৃটিশ সরকার। এত ঘাত প্রতিঘাতের সম্মুখীন হয়েও সঙ্ঘ পাঠাগার এখনও আমাদের সম্পদ নিঃসন্দেহে বলা যায়।
সঙ্ঘের বিভিন্ন বিভাগের উন্নতির প্রচেষ্টায় কিছু মানুষ তাঁদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন।
বাদ্যবিভাগে – সুবোধ মুখার্জী, নন্দ মখার্জী, গোপীনাথ দে ও মুরলী মোহন বসুমল্লিক।
খালি হাতে ব্যায়াম ও প্যারেড – ধরনী চ্যাটার্জী ও রামকমল দাস।
জিমন্যাস্টিকও যোগব্যায়াম – কালীপদ দাস ও প্রাণতোষ চ্যাটার্জী
বক্সিং – সনাতন চ্যাটার্জী।
একসময় গুরুসদয় দত্ত দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ব্রতচারী সঙ্ঘের সকল সদস্য-সদস্যাদের জন্য আবশ্যিক ছিল। ব্রতচারী গ্রাম থেকে শ্রদ্ধেয় কুঞ্জবিহারী দাস দীর্ঘসময় মাসকাল ব্যাপী সঙ্ঘে ব্রতচারী শিক্ষা দিয়েছিলেন।
৭৪নং কালাচাঁদ নন্দী লেনে আমাদের নিজস্ব ব্যায়ামাগার অত্যন্ত গর্বের। জিমন্যাস্টিক ও দেহ বিভাগের সদস্যরা বিভিন্ন সময় স্কুল – জেলা ও দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে সঙ্ঘকে গৌরবান্বিত করেছেন। শুরু হয়েছিল প্রদর্শনীমূলক জিমন্যাস্টিক দিয়ে। প্রতিযোগিতামূলক জিমন্যাস্টিক শুরু হয় সত্তরের দশকের প্রথম দিকে। যোগব্যায়াম বিভাগ ছোটদের জন্য শুরু হলেও অনেক বর্ষীয়ান সদস্য-সদস্যরা এই বিভাগে যোগদান করেন।
সঙ্ঘের নিজস্ব গৃহনির্মাণের জন্য সঙ্ঘসদস্যরা সক্রিয় হন। সন্তোষ কুমার দত্ত বৃন্দাবন মল্লিক লেনে আড়াই কাটা জমি দান করেন। পরবর্তীকালে ১২৩/৪, নরসিংহ দত্ত রোডে সঙ্গভবন তৈরী হয়, স্থপতি জ্ঞানেন্দ্র মোহন সেনের তত্ত্ববধানে। একই সঙ্গে দুর্গাপূজা ও সঙ্ঘের দৈনন্দিন কাজ যাতে সম্পন্ন হয় সেই উদ্দেশ্যে ১৯৬৯ সালে ২৮শে নভেম্বর ঠাকুর শ্রী শ্রী সীতারামদাস ওঙ্কারনাথ ঠাকুরের দ্বারা গৃহের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৯৭৬ সালে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর ভাইপো ডঃ শিশির কুমার বসু এই গৃহের উদ্বোধন করেন। দীর্ঘদিন সমাজসেবা প্রকল্প হিসাবে গরীব শিশুদের জন্য কার্ত্তিক চন্দ্র দত্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু ছিল, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিদ্যালয় চালানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
সঙ্ঘের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচী বাৎসরিক শিক্ষা শিবির। শুরু হয়েছিল ১৯৩৮ সালে ঘাটশিলায়। প্রথম থেকেই সঙ্ঘ কর্তৃপক্ষ এই শিবির কেবলমাত্র ভ্রমণের মধ্যে না গিয়ে ভোর ৫-৩০মিনিটে বিউগিল বাঁশির প্রাতরুত্থানের সংকেত দিয়ে রাত্রি ১০-১৫ মিনিট পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন ঠাসা কর্মসূচীর মাধ্যমে এবং কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যে শিক্ষার্থীদের নানা বিষয়ে শিক্ষা দিতেন। তার সঙ্গে ছিল প্যারেড, ব্যায়াম, ব্রতচারী, প্রাথমিক চিকিৎসা ও আরও অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদান। শিক্ষা শিবির থেকে সঙ্ঘ কর্তৃপক্ষ আগামী দিনের উপযুক্ত সঙ্ঘ পরিচালকদের খুঁজে নিতেন।
বর্তমান দিনে কোন সঙ্ঘ-সমিতি একবার বিভক্ত হয়ে গেলে, তা আর কোন সময়ে মিলিত হয়ে কাজ করতে পারে না। কিন্তু ১৯৫৪ সালে কিছুটা মত পার্থক্যের কারণে সঙ্ঘ দ্বিধা বিভক্ত হলেও সকলের শুভেচ্ছায় এবং সকল সভ্যগণের প্রাণশক্তি ও ঐকান্তিক আন্তরিকতায় তা আবার ১৯৬৫ সালে একসঙ্গে চলার শপথ গ্রহণ করে।
সঙ্ঘের রজত জয়ন্তী উৎসব সম্পন্ন হয় ১৯৪৯ সালে (১৩৫৬ বঙ্গাব্দে)। উৎসবে পৌরহিতা করেন কথা সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ও উপেন বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই উপলক্ষ্যে প্রশংসা মুখর বাণী পাঠিয়েছিলেন অরুণা আসক আলী, সুচেতা কৃপালিনী, শরৎ চন্দ্র বসু, মেজর জেনারেল এ. সি. চ্যাটার্জী, সন্তোষ কুমার বসু, চপলা কান্ত ভট্টাচার্য্য (আনন্দবাজার), আর. সি. চ্যাটার্জী (হিন্দুস্থান), নীহারেন্দু দত্ত মজুমদার প্রমুখ।
১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত হয় সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব। উৎসবে পৌরোহিত্য করেন শিক্ষামন্ত্রী মৃতুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। হীরক জয়ন্তী উৎসব অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৩ সালে। উৎসবে উপস্থিত ছিলেন অতুল্য ঘোষ ও বিচারপতি পদ্মা খাস্তগীর। ৭৫তম বর্ষে প্ল্যাটিনাম জয়ন্তী উৎসবে উপস্থিত ছিলেন প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সী। প্রতিটি উৎসবেই উপস্থিত হয়েছেন অনেক গুণীজন।
তারপর ১১ই ডিসেম্বর, ২০২২ বৈকালে পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শুরু হল গৌরবময় শতাব্দী জয়ন্তী উৎসব। শতবর্ষ এক উদ্যাপনের মুহূর্ত। একশো বছর বড় কম কথা নয়। দীর্ঘ সময়ে কিছু মানুষের আত্মত্যাগ। মহৎ কীর্তি তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা নিদর্শনের নিরিখে শতবর্ষের আলোকে তা আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। উদ্বোধনে উপস্থিত হলেন, নেতাজী রিসার্চ ব্যুরোর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ডঃ সুমন্ত বসু, কলিকাতা ইতিহাস বিভাগের বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ডঃ রাজশেখর বসু, হাওড়া পৌরসভার অধিকর্তা ডাঃ সুজয় চক্রবর্তী, পুলিশ কমিশনার (হাওড়া) শ্রী প্রবীন ত্রিপাঠি। দীননাথ শিশুসদনে হুইল চেয়ার ও বেড প্রদানের মত সমাজসেবামূলক কর্মসূচীতে নেওয়া হল। শতবর্ষের তথ্যচিত্র “ফিরে দেখা ১০০”, শতবর্ষের প্রতীক ও ওয়েবসাইটের উদ্বোধন হল।
১৫ই জানায়ারী, ২০২৩ একটি বর্ণাঢ্য গৌরবময় পদযাত্রা হাওড়া শহর প্রদক্ষিণ করে, এই পদযাত্রার শুভসূচনা করলেন নেতাজী রিসার্চ ব্যুরোর চেয়ারপার্সন মাননীয় ডঃ সুগত বসু। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দপ্তরের মাননীয় মন্ত্রী শ্রী অরূপ রায় ও হাওড়ার মাননীয় সাংসদ শ্রী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, এরপর ২রা অক্টোবর, ২০২৩ শতবর্ষের কর্মসূচীর মধ্যে অনুষ্ঠিত হল রক্তদান ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির।
আমরা সকলেই জানি বর্তমান এই অস্থির সময়ে যে কোন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের নৈতিকতা এবং ঐতিহ্যকে বহন করে এগিয়ে চলা খুবই কঠিন। তবুও নতুন প্রজন্মের সদস্য-সদস্যারা সেই ঐতিহ্যকে রক্ষা করে এগিয়ে চলেছেন আগামীর উদ্দেশ্যে। আমরা সবাই তাই মঙ্গলময় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি। “হাওড়া সেবা সঙ্ঘ” যেন তার নিজস্বতাকে না হারায়।